শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
নোটিশ :
Wellcome to our website...

অনুমোদনহীন ডায়াগনাস্টিক সেন্টার, দুমকিতে ভুতুড়ে রিপোর্টে গলাকাটা রমরমা বাণিজ্য!

দুমকি(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি / ৩৪৪ Time View
Update : শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

পটুয়াখালীর দুমকিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি সেন্টারগুলোর ভুতুড়ে রিপোর্টের ভুল চিকিৎসায় বিপাকে পরছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। আর্থিক ও মানুষিক হয়রানীর শিকার হচ্ছ রুগীর পরিবার। একাধিক ডায়াগোনাস্টিক সেন্টারের এমন ভুল রিপোর্টের চিকিৎসায় বেশ কয়েকজন রোগী আর্থিক হয়রানির প্রতিকারের দাবিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।

এছাড়াও অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বরত কর্মকতার অনৈতিক ঘুষ বাণিজ্যের কারণেই দিন দিন এসব অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গিয়ে রুগী ও তাদের স্বজনরা প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। উপজেলার নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস, ডক্টর্স পয়েন্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি সেন্টারের একাধিক ভুল রিপোর্টের চিকিৎসায় অন্তত: ১০রুগীসহ তাদের পরিবার গুলো আর্থিক হয়রানির শিকার হয়েছে।

সম্প্রতি মুরাদিয়ার বাসিন্দা আবদুর রহিম গাজীর সহধর্মিণী সাবেক ইউপি সদস্য মিসেস সামসুন্নার বেগমের ৬বছর বয়সী জরাক্রান্ত নাতি মেহেরাব ইসলাম সাফিনের রক্তপরীক্ষার জন্য নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস এ নেয়া হলে তার রিপোর্টে টাইফয়েড সনাক্ত হয়। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে লুথ্যারাণ হাসপাতালের চিকিৎসক খান মোঃ মশিউর রহমানের চিকিৎসায় সুস্থতার পরিবর্তে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। মুমুর্ষ‚ অবস্থায় তাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ নেয়ার ১দিন পর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল হাসাতালে স্থানান্তর করা হয়। শিশুর স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হলে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর একটানা ১৫দিনের চিকিৎসায় আরোগ্য হয়। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বেশ হয়রানীর শিকার হতে হয় পরিবারটিকে। ভুল রির্পোর্টের কারণে আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানীর এবং বিগত এক বছর যাবত ঢাকায় থেকে চিকিৎসা নিয়েও আজও সুস্থ হয়নি। এর প্রতিকার চেয়ে ২৮/০৭/২০২২ইং তারিখ তিনি পটুয়াখালী সিভিল সার্জনের দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ করলেও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের।

উপজেলার মুরাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফকু হাওলাদারের মেয়ে শিউলী আক্তার অভিযোগ করেন, গত বৎসর তিনি জরাক্রান্ত হয়ে লুথ্যারাণ হাসপাতালে ডা. অমিতাভ তরফদারের স্মরণাপন্ন হলে তিনি কয়েকটি টেস্ট দেন। তিনি শহরের মেডিকেয়ার ডক্টরর্স চেম্বারে টেস্ট করালে টাইফয়েড ধরা পরে। আব্বাস সিকদার নামের একজন টেকনোলজিষ্টের স্বাক্ষরিত টেস্ট রিপোর্ট অনুসারে চিকিৎসকের দেয়া টাইফয়েটের ইনজেকশন নেয়ায় সুস্থতার বদলে আরও বেশী অসুস্থ হন। বাধ্য হয়ে পটুয়াখালী সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মশিউর রহমানের অধিনে ভর্তি হন। পুণরায় টেস্টে টাইফয়েট জীবানু পাওয়া যায়নি। মেডিকেয়ারের টেস্ট রিপোর্টের ভুল চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হওয়ার বদলে আরও বেশী অসুস্থ হন এবং এমন ভুল চিকিৎসায় আর্থিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্তসহ হয়রানির শিকার হয়েছেন।

একই অভিযোগ করেছেন, জলিশা গ্রামের সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের ছেলে সৈয়দ আতিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, দু’ বৎসর প‚র্বে ১০/১০/২০২১ইং তারিখ তিনি পপুলার ডায়াগোনাষ্টিক সেন্টারে টেস্ট করাতে গিয়েও অনুরূপ ভুল রিপোর্টে কস্টভোগের পাশাপাশি অন্তত: ৪৭হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই ওইসব প্যাথলজীর অদক্ষ টেকনিশিয়ানরা টেস্ট রিপোর্ট স্বাক্ষর করায় সাধারণ রোগীসহ তাদের পরিবার গুলো ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

জানা গেছে, উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি উপজেলা হাসপাতালের পঞ্চাশ থেকে ১০০ গজ দ‚রত্বে নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস নামের প্রাইভেট হাসপাতালটির অবস্থান। উপজেলা হাসপাতালের আরএমও ডাঃ এনামুল হোসেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক। যার উদ্বোধন করেছেন স্বয়ং সিভিল সার্জন ডা. কবির হাসান। সরকারি অনুমোদনহীন এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সরকার নির্ধারিত ম‚ল্যের চেয়ে পাঁচগুণ ম‚ল্যে টেস্ট করা হচ্ছে। অদক্ষ প্যাথলজিস্ট, টেকনেশিয়ান ও এক্সরে টেকনেশিয়ান দিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। সিভিল সার্জন ও টিএইচএর সখ্যতা ও পার্সেন্টেজ বিজনেসের কারণেই তারা নিয়ম নীতির তোয়াকা ছাড়াই গলাকাটা ব্যবসা ও জনগণের সাথে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস এর পরিচালক বলেন, আমরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও জেলা শহরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মূল্য তালিকা সামঞ্জস্য রেখে টেস্টের টাকা নিচ্ছি। ভুল রিপোর্ট প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ ভুলের উর্ধে নয়, তবে সবসময় সতর্ক থেকে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট ও রিপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

উপজেলার ফোরসাইট মেডিকেল এন্ড প্যাথলজি সেন্টারের পরিচালক সৈয়দ মজিবুর রহমান টিটু বলেন, দুমকিতে অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নেই। লাইসেন্সের আবেদন করার পর শর্তমতে জনবল দিয়ে সবাই প্যাথলজীর ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে তার প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক আছে বলে দাবি করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর শহীদুল হাসান শাহীন বলেন, এসবতো পুরোনো কেস সব মনে নেই তবে যদি কেউ চাকুরীরত অবস্থায় অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন তার প্রমাণ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা: কবির হাসান’র কাছে প্রশ্ন করলে, যে একজন আরএমও হয়ে সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে কিভাবে একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করেন তিনি তার কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি এবং বিগত দিনে একাধিক অভিযোগের বিষয়েও জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। #


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর