বই উৎসবে রাঙামাটিরতে শিক্ষার্থীরাওমাঝে
সারাদেশের মত রাঙামাটিতে, অনুষ্ঠিত হয়েছে বই উৎসব। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা বই আনন্দে উদ্বেলিত। উৎসবকে কেন্দ্র করে ক্ষুদে শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর পুরো স্কুল ক্যাম্পাস। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্ব স্ব মাতৃভাষার বই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। তবে কারিকুলাম নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা। আর নতুন কারিকুলামের মাধ্যামে শিশুরা যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবলে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
সোমবার সকালে রাঙামাটি শহরের গোধুলী আমাতনবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসবের বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রাশসক জনাব মোহাম্মদ মোশারফ খান এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরিন সুলতানা, জেলা প্রাথমকিত শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেশ শীল, পিটিআই এর সুপারিন্টেডেন্ট এমরানুল ইসলাম মানিক, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
বই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায়। বই হাতে পেয়ে আনন্দে আত্মহার হার ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে বইয়ের প্রতিটি পাতা।
এবছর জেলায় ৭০৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯১ হাজার ৩১৬ শিক্ষার্থীর মাঝে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৯ টি সাধারণ বই এবং ৯ হাজার ৯৯৪ শিক্ষার্থীর মাঝে ৬৩ হাজার ৪৬৮ টি (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা) স্ব স্ব মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে।
প্রাক প্রাথমিকে চাকমা ভাষায় ১১ হাজার ৭৪, মারমা ভাষায় ২ হাজার ৩০৮, ত্রিপুরা ভাষায় ৬৩৬টি বই। প্রথম শ্রেণিতে চাকমা ১৬ হাজার ৫৯৩, মারমা ৩ হাজার ৫৩৪, ত্রিপুরা ১ হাজার ২টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাকমা ১৬ হাজার ৯৯৮, মারমা ৩ হাজার ৩৭৫, ত্রিপুরা ৯৫৪টি, তৃতীয় শ্রেণিতে চাকমা ৫ হাজার ৫৪০, মারমা ১ হাজার ১১২, ত্রিপুরা ৩৪২টি পাঠ্যবই চাহিদা আনুযায়ী পাওয়া যায়।
সরকার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে প্রাক প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয়েছে স্ব স্ব মাতৃভাষার বই। সাধারণ বইয়ের সাথে নিজের ভাষার বই হাতে পেয়ে খুশি নৃতাত্বিক শিশুরা। ২০১৭ সাল থেকে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষী শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে এসব বই। বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই হাতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমার বলেন, আমি দ্বিতীয় শ্রেণি হতে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেছি। নতুন বছরেই নতুন বই পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। নতুন বই পেয়ে আমি খুব খুশি।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকেয়া আক্তার জানান, নতুন বইয়ের ঘ্রাণ সব সময় ভালো লাগে। নতুন বই নিতে স্কুলে এসেছি। বইও পেয়েছি।
চাকমা ভাষায় নতুন বই পেয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্পা চাকমা জানান, আমি আমার চাকমা ভাষায় বই পেয়ে খুব খুশি। বাংলা শেখার পাশাপাশি এখন আমি চাকমা ভাষা শেখতে ও লিখতে পারবো।
অভিভাবক রাবেয়া আক্তার বলেন, নতুন কারিকুলাম শুরু হয়েছে। বাচ্চারা কি শিখবে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। তাই শিক্ষকরা যাতে এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভয় দুরে করে সেই বিষয়ে আমাদের আহŸান থাকবে শিক্ষকদের প্রতি।
আরেক অভিভাবক রুমা আক্তার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ভাত রান্না শেখাচ্ছে। এসব তারা বাড়িতে এমনি এমনি শিখবে। বাচ্চাদের পড়ালেখার জন্য স্কুলে পাঠাই ভাত রান্নার জন্য না।
রীতা চাকমা বলেন, আমাদের সময় আমরা চাকমা ভাষা বলতে পারলেও লিখতে পারতাম না। এখন স্কুলে মাতৃভাষা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এতে করে আমাদের বাচ্চারা আরও তাদের মাতৃভাষা ভালো করে শিখতে পারছে। তবে বিদ্যালয়গুলোতে মাতৃভাষা শিক্ষাদানের শিক্ষক সংকট রয়েছে। দ্রæত শিক্ষক সংকট দূর করা না হলে এই বই দেয়া কোনই কাজে আসবে না।
জেলা প্রাথমকিত শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেশ শীল জানান, চাহিদা অনুযায়ী সাধারণ বইয়ের সাথে মাতৃভাষার বইও বিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছে। আর মাতৃভাষা পাঠদানের জন্য স্ব স্ব ভাষায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ফেব্রæয়ারি আবারও শুরু হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সারা বিশে^র শিক্ষা ব্যবস্থায় যে কারিকুলাম রয়েছে সেই কারিকুলামগুলোর সাথে পর্যালোচনা করেই এই কারিকুলাম প্রস্তুত করা হয়েছে। সুতরাং এটি নিয়ে হতাশ হবার কিছুই নেই। এটি যুগোপযোগী এবং সারা পৃথীবির সাথে আমাদের শিশুরা প্রতিযোগিতা করতে পারে সেভাবেই এই কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে। আমি বিশ^াস করি এই কারিকুমালের মাধ্যমে আমাদের শিশুরা যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
বই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের হয়